দক্ষিণ আফ্রিকায় বিগত বছর গুলোর তুলনায় চলতি বছরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং ব্রেইন স্ট্রোক করে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।গত তিনমাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ডাকাতের গুলিতে,সড়ক দূর্ঘটনায় এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর চেয়ে হৃদরোগ এবং ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩.৩৬ শতাংশ।

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলতি বছরের জুলাই,আগষ্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে সর্বমোট ১১৬ জন বাংলাদেশী প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।এর মধ্যে গত তিনমাসে সর্বোচ্চ ৪৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেছেন। যা তিনমাসে সর্বমোট মৃত্যুর ৫৩.৩৬ শতাংশ।এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন ৩২ জন,সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জন এবং চোর ডাকাতের গুলিতে খুন হয়েছে ২৬ জন।

শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বরে যে ১৫ জন বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে ১২ জন হৃদরোগে এবং ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু স্বাভাবিক।প্রতিমাসে কমবেশি ৩০ জন বাংলাদেশী নানা ঘটনা দূর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করে থাকেন।তবে সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুর সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়েছে।হঠাৎ করে প্রবাসীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কেন মারা যাচ্ছে?বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা কথা বলেছি সাধারণ প্রবাসীদের সাথে।

দীর্ঘ দিন প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করার কারণে আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং সাধারণ প্রবাসীদের ধারণা অনুযায়ী নানা কারণে প্রবাসীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।করোনা পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসায়িক মন্দা,ব্যবসায়িক পার্টনারের সাথে ঝামেলা,চোর ডাকাতের ভয় এবং আতংক, দেশ থেকে কড়া সুদে নেওয়া ঋণের বোঝা,পারিবারিক কলহ সর্বোপরি স্বাস্থ্যের প্রতি অসচেতনতার কারণে হৃদরোগ সহ নানা ধরনের জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশীরা মৃত্যু বরণ করছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাকালীন সময়ে অনেক জায়গায় ব্যাবসা বানিজ্য মারাত্মকভাবে মন্দা চলছে।ব্যবসা খারাপ গেলে পার্টনারের সাথে মানসিক সংঘর্ষ লেগেই থাকে।সেই সাথে দোকানের খরচ এবং দেশে টাকা পাঠানো সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় একজন প্রবাসীকে।সেই সমস্যার মানসিক মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেকে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে।এর পরে দিনরাত চোর ডাকাতের ভয় এবং আতংকতো লেগেই আছে।তাছাড়া দেশ থেকে কড়া সুদে ঋণ নিয়ে সেই টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে প্রবাসীদের জন্য।হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার এটাও একটা অন্যতম কারণ।এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকদের পারিবারের মানসিক চাপ লেগেই আছে।

এছাড়া দেশে ঋণ করে নতুন যারা দক্ষিণ আফ্রিকা এসেছে তারা আসার পর থেকেই ঋণ পরিশোধের একটা কঠিন চাপ মাথায় নিয়ে সারাক্ষণ কাজ করতে গিয়ে কোন একসময় তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে।